fbpx
 

Reviews

সাম্ভালা

রিভিউ ১

বাংলা ভাষায় মৌলিক ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার!

ট্রেনে প্রায় পুরোটা পড়েছি, শেষ ৪৫ পৃষ্ঠা এখন পড়লাম। আটঘাট বেঁধে রিভিউ লেখার ইচ্ছা থাকলেও এখন সেটা সম্ভব না, অন্যকোনোদিন। অল্পকথায়, সাম্ভালার জন্য ছুটে চলেছে এক পথিক, যার জন্ম জানা নেই, মৃত্যু অনিশ্চিত। কে সে? হোরাস? নেবুলাস? মার্কাস ডাসিডিসিয়াস? সেইন্ট দ্য জারমেইন? মুগওয়া? জারমোনি? মানুষ হিসেবে তাকে সংজ্ঞায়িত করাটা বোকামী, মানুষের মতোই কিন্তু মানুষ না! না-মানুষ হয়ে সে বেঁচে থাকবে পৃথিবীর আলো বাতাসে, যেভাবে সে বেঁচে এসেছে ইতিহাসে, সেভাবেই খুঁজে যাবে সাম্ভালা- এক রহস্য।

সে দেখে এসেছে কুইন অব শেবা থেকে শুরু করে জুলিয়াস সিজারের মৃত্যু-নেপোলিয়ানের উত্থান হয়ে সিপাহি বিপ্লব পর্যন্ত, সাক্ষাৎ করেছে তিব্বতের শেরবানদের সাথে। সাক্ষী হয়েছে মানবজাতির ইতিহাসের, যেটা আসলে শুধুই বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। মায়ায় না জড়ানো না-মানুষও একদিন থিতু হয়ে গিয়েছে, সংসার করেছে। কিন্তু সংসারে কি যাযাবরের মন বসে?!

অতীত এসে মিশেছে বর্তমানে। খুন হয়ে গেছে অনেকগুলো, দৃশ্যপটে এসেছে পাগলাটে মানুষজন, যারা লুসিফার কিংবা শয়তানের উপাসনা করে হয়ে গেছে অমানুষ। এলিক্সার অফ লাইফ কিংবা অমৃতের সাথে এসে মিশেছে বর্তমানের স্রোত, ইতিহাস এর সাথে বর্তমান এক হয়ে গিয়েছে, ঢাকার জ্যাম ঠেলে পৌছে গিয়েছে মিশর, স্পেন, গ্রীস, তিব্বত, ভারত সবখানে। সবখানে তার ছাপ উপস্থিত, পাঠক হিসেবে আপনিও ছাপ রেখে আসতে পারেন, জড়িয়ে যেতে পারেন ভাবালুতায়।

পড়তে পড়তে এই সহস্রাব্দ প্রাচীন পথিকের সাথে হারিয়ে যেতে পারেন, ইচ্ছে হতে পারে সাম্ভালা কি জানার!

আসলেই, সাম্ভালা কি? এই শব্দের অর্থ জানতে হলে পড়ে ফেলুন বইটার অর্ধেক, আর অর্ধেক পড়ে ফেললে আপনি আর বইটা হাত থেকে নাও রাখতে পারেন! কারণ ততোক্ষণে কাহিনী জমে গেছে!

জেনে ফেলুন তাহলে, আমি ততোক্ষণে দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করার তোড়জোড় করি!

আর হ্যাঁ, এটা একটা ট্রিলজি। ট্রিলজি শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না আর কি! ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার জন্রা যদি আপনার পছন্দ হয়, তবে তিনটে একসাথে নিয়েই বসিয়েন। নইলে যাত্রার মাঝপথে থেমে যেতে হবে, ভাতটা ঠিক হজম হবে না!

প্লট দুর্দান্ত। রেসিপি ফলো করে কোনো ড্যান ব্রাউনের মতো গুপ্তসংঘ কে টানেননি লেখক, যাদের লক্ষ্য পৃথিবীকে সত্য জানানো। বরঙ, এটা একজন পরিব্রাজকের অ্যাডভেঞ্চার, যে জানতে চায় সাম্ভালা কি, জানতে চায় সাম্ভালার খোঁজ। বাতিঘরের প্রুফ রিডিং বাদ দিলে, বইটাতে প্রায় কোনো খুঁত নেই। থৃলার হিসেবে কোনো গালাগালি নেই। শরীফুল হাসান গড়গড় করে বলে গেছেন কাহিনী। পুরোটাই টানটান এক ফ্যান্টাসি অ্যাডভেঞ্চার!

সব মিলিয়ে পার্সোনাল রেটিং ৪.৫।

শুভ যাত্রা! 😃

Review By- তানভীর রুমি। Oct 27, 2019

রিভিউ ২

This is one of the best and most amazing novels I’ve ever read!
I started it at 2 Pm and finished in 8 hours
When I finished it at almost 9pm, I couldn’t sleep.
From the instant the book starts, immediately grabs the readers attention, grabbing them by the throat and making them read on right until the end!
I like conspiracy theories, so the whole basis of the book was interesting.
Obviously most of what is in the book is fiction, but Shariful Hasan’s story telling makes you think it’s real.
I thought his use of real places, people and events in what is a fictional story was very clever.

If you’re into mystery/suspense genre, history or secret, I recommend this.

Review By: Ayon Bit. Jan 7, 2015

রিভিউ ৩

Firstly, I apologize for making the comment I am about to make, and that is, “I honestly didn’t expect a Bangladeshi writer to have the guts to write a novel of it’sunique genre”.

Maybe by now you have started to think that I am some kind of traitor or something like that. No! I am not! Being an avid and voracious reader from my childhood, it was set in my brain that, Bangladeshi fantasy writers specialized in telling real life stories, embedded with emotions, and horror stories, and science fictions. But a fantasy of totally mind-blowing kind, one involving a kind of mythical storyline and mythical characters (like immortals!) in present day background, was way out of my imagination. When I first took the first book of this series (that means this book), I read some pages and i discovered that an unusual type of magnetism was keeping me glued to the “weird” and “impossible” and “really amazing” and “omg type of” story of this book. I had to finish this book in two or three sittings and at last discovered a deeply amazed reader (that’s me) sitting on his bed and still internalizing the shock of reading such a wonderful story and visualizing the fantastic scenes from the book.

In one word, this series is one of a kind. Though in my opinion the third and last book of this series is the best, this book was truly amazing and enchanting.

Review By- Saleh Tias, Dec 16, 2014

সাম্ভালার আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/20412351

সাম্ভালা ট্রিলোজি অখণ্ড

স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ—

বইয়ের নাম সাম্ভালা হলেও প্রকৃত নাম হচ্ছে ❛শাম্ভালা❜ বা সাংগ্রিলা। বইটি পড়ার শুরুতে বা কেনার পূর্বে মাথায় আসতে পারে এই সাম্ভালা কী বা কেন এই নামকরণ? শাম্ভালা হচ্ছে পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় এক স্থান। অনেকের চোখে পৌরাণিক রহস্যে ঘেরা এক দেশ। পৌরাণিক বলার পেছনে কারণ রয়েছে, বইয়ের তথ্য অনুসারে তিব্বতের কৈলাস পর্বতের মানস সরোবর ও রাক্ষসতাল হ্রদের মাঝামাঝি এক জায়গায়তে এই শাম্ভালা রাজ্যের অবস্থান। শাম্ভালার বিশেষত্ব হচ্ছে বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসে এই জায়গার উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন কালচক্র তন্ত্র থেকে তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের জ্যাংজুং সংস্কৃতিতে এই রাজ্য বা শহরের নাম পাওয়া গিয়েছে।

শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্মীয় মানুষদের কাছে এই শাম্ভালা আটকে থাকেনি, হিন্দুদের কাছে আর্যদের পবিত্র রাজ্য এই শাম্ভালা। চীনাদের কাছে এই রাজ্য ‘হেসি তিয়ান’ নামে পরিচিত। পশ্চিমা জগত আবার একে ‘হোসি ওয়াং মু’ নামে চেনে। বিস্ময়কর এই স্থানটি নিয়ে প্রচুর মিথ প্রচলিত থাকলেও বিভিন্ন ধর্মের জাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করে পৃথিবীতে এই শাম্ভালার অস্তিত্ব রয়েছে। যে রাজ্যে সম্রাট অশোকের বিশেষ নয়জন ব্যক্তি শাম্ভালার গোপন জ্ঞান ও শিক্ষা খুবই গোপনীয়তার সাথে রক্ষা করে যাচ্ছে। এছাড়া বিষ্ণুপুরাণেও উল্লেখ রয়েছে, বিষ্ণুর অবতার কল্কির জন্মস্থান এই শাম্ভালায়।

শাম্ভালা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ইতিহাস টানা লাগবে তাই ইস্তফা দিয়ে দিচ্ছি। বইয়ের ধারাতে ফিরে আসি, কথা বলি সাম্ভালা ট্রিলজির প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু নিয়ে। এই সাম্ভালা রাজ্যে বা লুকায়িত শহরকে উদ্দেশ্য করে পুরো ট্রিলজির প্রেক্ষাপট দক্ষ হাতে তৈরি করেছেন লেখক শরীফুল হাসান। ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে ছোটো ছোটো মূল কারণগুলো নিয়ে গল্পের সাথে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল সবকিছু, বিশ্বাসযোগ্য (বইয়ের কাহিনি অনুযায়ী) লেগেছে অতিরঞ্জিত কোনো কিছু মনে হয়নি। এত বিশাল কলেবরে প্রেক্ষাপট সামলাতে গিয়ে একেবারে যে উতরে গিয়েছে এই ভাবনা ভাবাও ভুল। তাল সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন, মাঝেমধ্যে চরিত্রের উদ্দেশ্য হারিয়েছেন। তবে সেগুলো মাথা না নিয়ে পরিপূর্ন রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গী হয়ে শেষ অব্দি যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

➲ আখ্যান—

সাম্ভালা একটি রহস্য-এর খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। সত্যি কি এর অস্তিত্ব আছে? কেউ কি এর খোঁজ পেয়েছে শেষ পর্যন্ত?

ছোট্ট একটি গ্রামে কাহিনির সূত্রপাত। ইতিহাস এবং বর্তমান হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে সহস্রাব্দ প্রাচীন এক রহস্যময় পরিব্রাজকের সঙ্গি হয়ে। ইউরোপ, মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট। অবশেষে রহস্যময় অভিযাত্রীর সাথে যোগ হয় বর্তমানকালের এক যুবকের ছুটে চলা, যার পেছনে ধাওয়া করছে তার বন্ধুর হত্যাকারী শয়তান-উপাসকের দল। প্রাচীন সেই পথিক কি দেখা পেয়েছে সাম্ভালা’র? জানতে হলে পড়ুন শরীফুল হাসানের এক অনবদ্য থ্রিলার উপন্যাস “সাম্ভালা”

➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

একজন অ্যাডভেঞ্জার প্রেমী হিসেবে এই ট্রিলজি-কে দেশিয় প্রেক্ষাপটে সেরার কাতারে অবশ্যই রাখব৷ উক্ত ট্রিলজি নবাগত লেখকদের ফ্যান্টাসি থ্রিলার সাহিত্যকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ভবিষ্যতেও করবে। অনেক লেখক ইতোমধ্যে এই প্রেক্ষাপট ও প্লট বিল্ডাপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে একইসাথে ইতিহাসের মেলবন্ধনে সৃষ্ট অসাধারণ এই সাম্ভালা ট্রিলজি বিশ্ব দরবারে বেশ প্রসিদ্ধ স্থান দখল করে নিতে পারবে বলে বেশ আশাবাদী। এই ট্রিলজির ইংলিশ ভার্সন অলরেডি পাওয়া যাচ্ছে।

● প্রারম্ভ—

যেহেতু সম্পূর্ণ ট্রিলজি পড়েছি তাই প্রারম্ভ তিন খণ্ডে তিনভাবে শুরু হয়েছে। সেদিক থেকে মূল কাহিনির সূচনা যেখান থেকে হয়েছে সেদিক থেকে আলোচনা করা যাক। প্রথম খণ্ডে শুরুতে এক বৃদ্ধের কাহিনি দিয়ে গল্পের সূত্রপাত। গল্পে ঢোকার জন্য যথেষ্ট ছিল, কাহিনির সাথে জড়িয়ে যেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়নি৷ রোমাঞ্চকর যাত্রার প্রথম রোমাঞ্চ বেশ ভালোভাবে হয়েছে। শুরুটা এখনও চোখে ভাসে, সাদামাটা শুরু হওয়া গল্প যে এত বিস্তৃত কে জানত।

● গল্প বুনন—

লেখক খুব ভালো গল্প বুনন করতে পারেন৷ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যেভাবে গল্পের সিকুয়েন্স, চরিত্রের স্থান-কাল সাজিয়েছেন এক কথায় অসাধারণ। লেখকের প্রধান কাজ থাকে নিজের কাহিনিকে পাঠকের মানসপটে জীবন্ত করে তোলা, ভাসা ভাসা ভাবে সবকিছু চোখের সামনে ভেসে ওঠা। যখন পাঠক তৃপ্তি নিয়ে সেইসব দৃশ্যায়ন সাবলীল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তখন পূর্ণ স্বার্থকতা আচ্ছাদিত হয়ে আঘাত হানে লেখকের মনে। পাঠক পুলকিত হবেন সেটা দেখে লেখক স্মিত হাসি হেসে বলবেন—আমি স্বার্থক, আমার সৃষ্টি স্বার্থক।

● লেখনশৈলী—

যে বিষয় পাঠককে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে এবং লেখক থেকে লেখককে আলাদা করে রাখে তা হচ্ছে লেখনশৈলী। পাঠক কোনো বইয়ের শুরুতে যে বিষয় লক্ষ করে সেটা হচ্ছে লেখনশৈলী। লেখক কীভাবে তার লেখা লেখেছেন, শব্দ চয়নে কেমন শব্দ নির্বাচন করেছেন। সাবলীল ভাবে সেগুলো বাক্যের মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছেন কিনা এইসব কিছু। সাম্ভালা ট্রিলজিতে এই লেখনশৈলী বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গল্পের সাথে হুকড করার মতো যে শক্তি সেটা লেখক এই লেখনশৈলীর মধ্যে দিয়ে দেখিয়েছেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্ণনা থেকে ফাইট সিকুয়েন্স, চরিত্রের সংলাপ ইত্যাদি সহজ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দেখে কাহিনি গতিময় ছিল, থমকে যাওয়া বা বোরিং হওয়ার কোনো চান্স ছিল না৷

● বর্ণনাভঙ্গি—

গল্পের গাঁথুনিতে বাক্যের সাবলীলতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই যেমন, লেখক কোনো ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে সেই ঘটনার বিভিন্ন দৃশ্য একই সাথে চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, অনুভূতি জীবন্ত করে তুলে ধরছেন সেটা সম্ভব বর্ণনার বিবরণের মাধ্যমে। সাম্ভালা ট্রিলজির প্রত্যকটি গল্প, গল্পের পেছনের ঘটনাবলি, সেগুলা কীভাবে ঘটেছে ইত্যাদি বিষয়গুলো সুনিপুণভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। সবুজ পাহাড়ের বুকে ঝড়ে পড়া তুমুল বর্ষণ থেকে কাঠমুন্ডু ও তিব্বতের সৌন্দর্যের রূপরেখা শিল্পী তুলিতে আঁকলে যেভাবে দেখায় ঠিক সেইভাবে দেখিয়েছেন। চরিত্রের মধ্যকার সাসপেন্স, দূরত্ব, অনুসরণ, লুকোচুরি খেলা, ইতিহাসের মাহাত্ম্য কোনকিছু বাদ রাখেননি বর্ণনা করতে। কাহিনির স্বার্থকতা এইখানে যে লেখক তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ও ধ্যান এই জীবন্ত বর্ণনার পেছনে ব্যয় করেছেন বলে।

● চরিত্রায়ন—

পুরো কাহিনিতে ছিল চরিত্রের মনোমুগ্ধকর খেলা। কখনও রূদ্ধশ্বাসে এক চরিত্র অন্য চরিত্রকে ধাওয়া করা, আবার কখনও পদে পদে বিপদের মুখোমুখি লড়াই করা। চরিত্র বিল্ডাপে লেখকের ত্রুটি তেমন ছিল না। প্রত্যক চরিত্রের ব্যাকস্টোরি ছিল তরতাজা। সামান্য চরিত্রের গুণ খুব ভালোভাবে প্রকাশিত করতে পেরেছেন। বিশেষ দুই চরিত্রের পাশাপাশি অন্যান্য যতসব চরিত্র সৃষ্টি করেছেন সবার মধ্যে উৎকৃষ্ট শক্তিসামর্থ্য, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আগেই বলেছি লেখক ইতিহাসের অনেক কিছু টেনেছন গল্পের স্বার্থে সেদিক থেকে বিশেষ এক চরিত্রের ব্যাকস্টোরি দারুণ ভাবে যুক্ত করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। প্রোটাগনিস্টের ব্যবহার করেছেন দক্ষতার সাথে, পাঠকের জন্য রয়েছে শেষদিকে চমকপ্রদ সাসপেন্স। চরিত্রের সাসপেন্স ও প্লটের আর্কষণ দুই মিলে এই রোমাঞ্চকর যাত্রা সত্যিকার অর্থে রোমাঞ্চিত করেছে।

● সমাপ্তি—

কাহিনির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনা লেখক সৃষ্টি করে আবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন সেদিক থেকে সফল হয়েছেন। কারণ আমি সন্তুষ্ট। আমি অনেক অভিযোগ দেখেছি যে দ্বিতীয় খণ্ড প্রায় পাঠকের ভালো লাগেনি বা রুচির সাথে মেলেনি৷ তবে আমি বলব কাহিনির মূল গাঁথুনি ছিল এই খণ্ডে। প্রোটাগনিস্ট তৈরি থেকে সব চরিত্রকে একজোটে বেঁধে নিয়ে এসে এক স্থানে বন্দি করার প্রক্রিয়া সত্যিকারের রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেই। যারা ‘তিগো’ ভালোবাসেন এবং রোমাঞ্চকর জার্নি পছন্দ করেন তাদের জন্য সোনায় সোহাগা বলা যায়। ইতিহাসের মিশেলে নতুন এক স্বাদ পাঠকের অন্তরে স্রোতের মতো প্রভাবিত হবে৷ সমাপ্তি যেমন দরকার ছিল তেমন হয়েছে, খুব বেশি ধীরে নয় আবার খুব দ্রুতও নয়। কাহিনি শেষে চরিত্রের মাধ্যম যে ম্যাসেজ লেখক দিয়েছেন সেটাও বেশ যুক্তিযুক্ত। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে এই প্রবাদবাক্য একেবারে জুতসই৷

.

চরিত্র নিয়ে বিস্তারিত লেখতে গেলে অনেক কিছু লেখা লাগবে৷ সং‌ক্ষেপে বলে দিলে এখানে অবিনশ্বর চরিত্রের পাশাপাশি খারাপ আত্মার এক রক্তপিপাসু রয়েছে। যে অদম্য শক্তির অধিকরি এবং মূল অ্যান্টাগনিস্ট৷ তবে শত্রুর অভাব নেই, ভালোর পাশাপাশি খারাপ দিকটা লেখক মাথায় রেখে সমানে সমানে লড়াই করিয়েছেন। একজন পৃথিবীর জন্মের সূচনালগ্ন থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন অন্যদিকে ২০০ বছর ধরে সেই রক্তপিপাসু অবিনশ্বর মানুষটার সাথে দ্বন্দযুদ্ধে লিপ্ত হতে এগিয়ে যাচ্ছেন। এরমাঝে কাল্ট সোসাইটি থেকে শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ, র’ এজেন্ট, চোরাকারবারি, মাফিয়া সব রকমের চরিত্র দিয়ে ঠাঁই পেয়েছে সাম্ভালার পাতায়। এছাড়া খুটিনাটি অনেক কিছু লেখার থাকলেও অফ গেলাম। নিজ দায়িত্বে পড়ে নেওয়া ভালো।

রাশেদ-রাজুর মতো টিনেজ চরিত্র কিশোরদের অনেক মুগ্ধ করবে। কিশোর অ্যাডভেঞ্জার উপন্যাস হিসেবে অনায়াসে বিবেচনা করতে পারবে এই ট্রিলজিকে।

সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর এই যাত্রায় সঙ্গী হওয়ার জন্য আহবান রইল।

➢ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

ইতোমধ্যে শরীফুল হাসান দেশিয় লেখকদের মধ্য আমার পছন্দনীয় একজন। ওনার লেখনশৈলী এবং গল্প বুননে যে দক্ষতা রয়েছে তা অসামান্য। তরুণদের মোটিভেট করেছেন, করে যাচ্ছেন৷ ‘সাম্ভালা’ ট্রিলজির ন্যায় ওনার ‘অন্ধ জাদুকর’ ট্রিলজি আরেকটি দুর্দান্ত উপন্যাস হতে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে। এছাড়া যেভাবে সামাজিক থ্রিলারের মতো জনরা বিল্ডাপ করেছেন পাঠক বেশ আকৃষ্ট হয়েছেন। ইতিহাস, থ্রিলার ও রোমাঞ্চ নির্ভর জনরাতে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বটে। দোয়া রইল আগামীতে যাতে ওনার তরফ থেকে আরও অসাধারণ সব বই পাঠক উপভোগ করতে পারে। ব্যক্তিত্বের দিক থেকে তিনি ভীষণ অমায়িক একজন মানুষ, এত বড়ো লেখক অথচ সবরকম আলোচনায় পাঠকদের সাথে সব শেয়ার করেন, ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দেন এই ছোটোখাটো কাজগুলো একজন লেখককে সম্মান করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শুভকামনা রইল।

● সম্পাদনা—

অখণ্ড এই ট্রিলজিতে ছোটো ছোটো অনেক জায়গায় সম্পাদনার অভাববোধ করেছি৷ কিছু বাক্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা গিয়েছে৷ তবে সেগুলো আরেকবার সম্পাদনা করলে অনায়াসে ঠিক করে ফেলা যায়৷

বিশেষ এক জায়গায় লেখক লেখেছেন, হিন্দুধর্মের অবতার শিব!

আসলে শিব বা মহাদেব স্বয়ং আদি দেবতা, যিনি ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-লয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি স্বয়ং ঈশ্বর তাই এই বাক্যতে ‘অবতার’ ইন্ডিকেট করাটা ভুল হয়েছে। তথ্যগত ভুল ছিল আশা করি নতুন লিমিটেড সংস্করণে এই সমস্যা সমাধান করা হবে৷

এছাড়া মেজর কোনো সমস্যা বিশাল কলেবরের বইতে চোখে পড়েনি, আর যেহেতু ফিকশন তাই ইচ্ছে করে কিছু জিনিস এড়িয়ে যেতে হয়েছে। বেশি খুঁতখুঁত থাকলে ফিকশন বই পড়া উচিত নয়৷

● বানান—

বানান নিয়ে বিশাল অভিযোগ, লেখক স্বয়ং এইসব কিছু ঠিক করে নিয়েছেন ইতোমধ্যে নতুন সংস্করণের জন্য। তাও উল্লেখযোগ্য যে ভুলগুলো ছিল। প্রকাশনার উচিত এই দিক বিশেষভাবে লক্ষ রাখা৷ ৮০% নির্ভুল হলেও বই সুখপাঠ্য হয়।

১. কোনো এক অদ্ভুত কারণে ‘ষ্ট’ সম্পূর্ণ মিসিং ছিল। সেখানে এই উদ্বৃতিচিহ্নের (’) ব্যবহার দেখা গিয়েছে। কোনো কারণে ‘ষ্ট’ ফাইন্ড রিপ্লেস করতে গিয়ে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ৭৩, ৭৭, ৮৫, ৯৮, ৯৯, ১০৯, ১৭২, ১৮২ উক্ত পৃষ্ঠা গুলো দেখলে সেটা ক্লিয়ার হবেন যদিও এইরকম ভুল পুরো বইতে রয়েছে।

একইভাবে ‘ষ্ণ’ পুরোপুরি গায়েব। ৩৯৬ ও ৪০১ পৃষ্ঠা সহ আরও অনেক জায়গায় এই ভুলের দেখা মিলবে।

২. ‘ন ও ণ’ এর বিশাল ভুল লক্ষ করা গিয়েছে। যেমন : ‘কিছুক্ষন, যতক্ষন, বিষন্ন’ শব্দগুলোর সঠিক বানান ‘কিছুক্ষণ, যতক্ষণ, বিষণ্ণ’ এইরকম হওয়ার কথা কিন্তু অনেক ‘ণ’ শব্দের জায়গায় ‘ন’ থেকে গিয়েছে।

৩. কি/কী এর ব্যবহারে অনীহা। কোন বাক্যটি প্রশ্নবোধক, কোনটি বিস্ময়সূচক এইসবের ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ পেয়েছে।

৪. ‘ও-কার’ ফরমেটে মিশ্র বানান প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।

৫. গুরুত্বপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ বানান লেখা হয়েছে ‘গুরুত্বপুর্ন, ঝুকিপুর্ন’ এইভাবে।

৬. হ্রস্ব ই-কার (ি) ও দীর্ঘ ঈ-কার (ী) এর ভুল ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত চোখে পড়েছে।

৭. জঙ্গল/জংগল, পাম্পসু/পাম্পশু এইরকম ভুল তো আছেই।

৮. ৩৬৯,৩৭০, ৪১৭ ও ৪১৮ পৃ: ‘বিনোদ চোপড়া’ চরিত্রের নাম একবার হয়েছে ‘ডবোনদ’ আরেকবার ‘আকাশ’ এইরকম!

৯. ‘ব্রাহ্মণ’ বানান কে ‘ব্রাক্ষন’ লেখা রয়েছে।

১০. ‘নিঁখুত’ বানান লেখা ‘নিঃখুত’ ভাবে।

১১. ৪৪৯ পৃ: ‘পাল্লায়’ কে ‘পালণ্ঢায়’ লেখা হয়েছে।

● প্রচ্ছদ, নামলিপি—

‘সাম্ভালা’ নামলিপি বেশ পছন্দ হয়েছে। এই নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলেও প্রচ্ছদ বেশ সাদামাটা মনে হয়েছে। অথচ এই বিশাল বইয়ের প্রেক্ষাপট অনুসরণ কত কী যে ফুটিয়ে তোলা যেত তা অভাবনীয়। আশা করছি এই হিস্টোরিক্যাল ফ্যান্টাসি বইটি নতুন সংস্করণে যোগ্যতম প্রচ্ছদ পাবে৷ সাদামাটা প্রচ্ছদ ভেবে কেউ আমার সাধারণ মনে করিয়েন না, এই বই কভার দেখে বিচার-বিবেচনা করা নির্বুদ্ধিতা।

● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা—

অলৌকিক ব্যাপার ঘটেছে এইখানে। সবার অভিযোগ যে সাম্ভালা পড়তে গিয়ে পাতা ছিড়ে গিয়েছে, শান্তিতে পড়তে পারিনি। উপভোগ্য ছিল না, এই সমস্যা ওই সমস্যা। সমস্যা যে একেবারে ছিল না তা না। ঢাউস সাইজের এই বই আরাম করে পড়া একপ্রকার কল্পনা। তবে আমি নিজ স্টাইলে আরাম করে পড়ে গিয়েছি। কোনো পাতা খসে পড়েনি, বাঁধাই শক্তপোক্ত ছিল। কাগজ ছিল ক্রিম কালারের, ফন্ট স্পেসিং, লাইন গ্যাপ সব ওকে৷

নতুন লিমিটেড এডিশন আসছে। সজল ভাইয়ের নামলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে আশা করি প্রচ্ছদও শীঘ্রই দেখতে পাব, দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। আর সেই মুখিয়ে থাকাতে স্থগিত থাকতে হবে। কেনা আর হবে না এই এক বেদনা৷ যার কিনবেন তারা ভাগ্যবান কারণ ভুল ত্রুটি একেবারে কমিয়ে ফেলা হয়েছে, নতুন নামলিপি, নতুন প্রচ্ছদ সাথে তিনটে খণ্ড বক্সসেট হিসেবে বিক্রি হবে। তাই প্রস্তুত হয়ে যান।

➠ বই : সাম্ভলা : এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা (অখণ্ড)
➠ লেখক : শরীফুল হাসান
➠ জনরা : হিস্টোরিক্যাল অ্যাডভেঞ্জার ফ্যান্টাসি
➠ অখণ্ড প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮
➠ টাইপোগ্রাফি : নিউটন
➠ প্রচ্ছদ : ডিলান
➠ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
➠ মুদ্রিত মূল্য : ৭২০ টাকা মাত্র

রিভিউঃ পিয়েল রায় পার্থ, Feb 26, 2021

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/38490224

ছায়া সময়

রিভিউ

সাতসকালে দোকান খুলতেই কেউ একজন গুলি করে বসলো স্বনামধন্য পরিবারের বড় সন্তান কামরুল আকন্দকে। স্থানীয় থানার দারোগা আমিনউদ্দিন তদন্তে নেমে দিশেহারা অবস্থায় পরে গেলেন।
কে আছে এর পেছনে? আকন্দ পরিবারের কেউ নাকি বাহিরের কোন মানুষ?

‘ছায়া সময়’ আমাদের ফেলে আসা আশ্চার্য এক সময়ের গল্প! নকশালবাদী আন্দলনে যখন পশ্চিমবঙ্গ তালমাটাল তখন ব্রহ্মপুত্রের এপাড়ে ঘটে যাওয়া খুবই সাধারণ কিছু মানুষের গল্প দারুণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন শরীফুল হাসান।
গল্পে নিজেকে খুঁজে ফেরা কামরুল যেমন আছে তেমনি আছে নেশা’র রাজ্যে নিঃশেষ হওয়া রহমান। আছে রাতারাতি ধনী বনে যাওয়া প্রতাপশালী করিম আকন্দ। আরো আছে অনন্যা। কাউকে ভালোবাসে সে। আছে অর্ণব। উদাসীন এক যুবক। কষ্টগুলোকে সাথি করে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয় সে। আছে শেঁকড়ের টানে বারবার ফিরে আসা তপন।
ইউসুফ জালাল আকন্দ পরিবারের মেয়ে জামাই। ক্ষমতা আর টাকার জন্য সেই বা কতোদূর যাবে?
এরকম অনেক চরিত্র নিয়েই ‘ছায়া সময়’। অনেক হবার পরেও সবগুলো চরিত্রই সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছে বলে মনে হয়েছে। তাইতো গল্পের পেছনের গল্পগুলোও নিছক ‘স্মৃতি’ না হয়ে তৈরী করেছে সার্থক মায়াজাল।

“আকন্দবাড়ির বড় ছেলে কামরুলকে গুলি করার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া গল্পটায় একে একে জড়িয়ে পরে সবগুলো চরিত্র। ধিরে ধিরে প্রকাশ পেতে থাকে তাদের ভেতরের ভালো-মন্দ, লোভ-লালসা আর সম্পর্কের টানাপোড়েন।”

ইউসুফকে প্রথম দিকে এলোমেলো মনে হলেও গল্পের সাথে সাথে তার চরিত্রও দৃঢ়তা পেয়েছে। ছেলেবেলা থেকে কিছু না পাওয়ার পরেও পরিবারের দুর্দিনে তার ফিরে আসা; অপমানিত, নিঘৃত হবার পরও রহমানের উপর স্নেহ ইউসুফের চরিত্রের দৃঢ়তাকেই প্রমাণ করে।
অনন্যাকেও ভালো লেগেছে। ঐ সময়টা এমনই ছিল হয়তো, শত কষ্টের মাঝেও মনের কথা মনেই রয়ে যেতো। প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিল সে।
করিম আকন্দ রাগী, হিংস্র অথচ আপন সন্তান না হয়েও কামরুলের জন্য তাঁর ভালোবাসা পিতৃস্নেহের চিরায়ত উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আমিনউদ্দিন দারোগা তার মতোই, বিন্দাস। আশির দশকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চরিত্রগুলোর আরো একটি সার্থক উদাহরণ হয়তো তিনি।
আলম আকন্দ, জলিল আকন্দ, আলাল মিয়া, কাশেম আলী চরিত্রগুলো গল্পের প্রয়োজনেই এসেছে। এদের কেউ ভালো, কেউ মন্দ; কেউ সম্পত্তির লোভে অন্ধ আবার কেউবা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে গ্রাম্য রাজনীতির সর্বময় কর্তা। আরও আছেন অনিমেষ, লোকমান, সহদেব। আছে, কোহিনূরের মতো কুখ্যাত একজন ডাকাত!
তপন কিংবা অর্ণব; নায়ক বলবেন? না থাক, spoiler না দেই; হয়তো সব গল্পেই এমন কিছু চরিত্র থাকে যাকে ঘিরে পাঠক মনের ভেতরে গল্পটাকে দাড় করাতে চায়, কিন্তু শেষে?
পাঠক, শেষের কাঁটাছেড়ার এই অংশটুকু আপনাদের জন্যই রেখে দিলাম।

মন খারাপ করা উপন্যাস কখনওই আমার ভালো লাগেনি। তবে ‘ছায়া সময়’ কেমন করে যেন ভালো লেগে গেলো। হয়তো লেখকের জাদুকরী লেখনী, আথবা চমৎকার কিছু চরিত্র কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণ গল্পটার জন্যই। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, গল্পের চেয়েও চরিত্রগুলোকে আমার বেশি ভালো লেগেছে, তাই কাহিনী বিন্যাসে চরিত্রগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়ে গেলো। তারপরেও আমি খুব করে চেয়েছিলাম লেখাটার সমাপ্তি ‘একটু অন্যরকম’ হোক। শেষে তাই হতে দেখে ভালো লেগেছে।

গল্পের পরে বানান আর অক্ষর বিন্যাস নিয়ে শরীফুল হাসানের কাজ প্রশংসনীয়, ভদ্রলোক পরিস্কার ভাবে সংলাপ আর বর্ণনা আলাদা করেছেন। খুবই অল্প কিছু ভুল বানান আর দু’একটা লাইনর ভেঙ্গে যাওয়া তাই মাফ করাই যায়।

প্রচ্ছদে জিয়াউদ্দিন বাবু’র কাজ সুন্দর হলেও আমি ডেমো প্রচ্ছদটাকেই এগিয়ে রাখবো। বাতিঘরের font বাছাই নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কাগজ আর বাঁধাই বরাবরের মতোই মানসম্পন্ন, আকর্ষণীয়।

শেষে, আমরা যারা আশির দশকের সেই আশ্চার্য সময়ে জন্মেছি তাদের জন্য স্মৃতি রোমন্থনের উপলক্ষ হয়ে থাকবে ‘ছায়া সময়’। আর যারা নবীন, তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ঠাই পাবে ৪০ বছর আগের একটি শহর, পুরনো সেই সব মানুষ, তাদের জীবনযাপন, অর্থনীতি, রাজনীতি, চাওয়া-পাওয়া আর ভালবাসার আশ্চার্য সব আখ্যান।

এক কথায়, দারুণ একটা প্লটে অসাধারণ কিছু চরিত্রের জন্যই ‘ছায়া সময়’ আমার অনেক দিন মনে থাকবে।
৩০০ টাকা মূল্যের ২৮৫ পৃষ্ঠার সুদৃশ্য এ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে ‘বাতিঘর প্রকাশনী।’ অমর একুশে বইমেলা, বাংলাবাজার, নীলক্ষেত সহ সকল অনলাইন বুকশপে আকর্ষণীয় ছাড়ে পাবেন ‘ছায়া সময়’।
তাই, যারা এখনো বইটি সংগ্রহ করেননি ঝটপট কিনে শরীফুল হাসানের সাথে উঠে পড়ুন মায়াবী এই ‘টাইম মেশিনে’। আমি কথা দিচ্ছি, কেউ’ই ঠকবেননা।

ভালো থাকুন সবাই। বই কিনুন, বই পড়ুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
® ডাঃ তানভীর, নিপসম, মহাখালী, ঢাকা।

Feb 17, 2019

আরো রিভিউ https://www.goodreads.com/book/show/43832953

আঁধারের যাত্রী

রিভিউ

‘ফুল কলি’ প্রকাশনীর কর্ণধার মোফাজ্জল হোসেন কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি পান্ডুলিপি পেলেন। পান্ডুলিপি দেখে তার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো। কারন, পান্ডুলিপি কোনো কাগজে আসেনি। এসেছে পেনড্রাইভে করে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পান্ডুলিপিতে লেখকের নাম নেই।
তবে ভিতরের গল্পটা পড়লেন। এবং পড়েই খুব উত্তেজিত হয়ে পরলেন ছাপবেন বলে। কিন্তু লেখকের নাম ছাড়া কি করে ছাপবেন?
ফেইসবুকে লেখাটা নিয়ে একটা স্টেটাস দেয়ার পরে তাকে একটি অপরিচিত আইডি থেকে জানানো হয় লেখকের নাম “অরি”।

বই ছাপা শেষ হলো। বই বিক্রি হলো ব্যাপক হারে। দারুণ পাঠক প্রিয় হয় বইটা। কিন্তু সেই বইতে কি এমন কাহিনী আছে? লেখক কেন তার পরিচয় গোপন করে?

–আচ্ছা যাক সে কথা,সেটা আপনারা বই পড়েই জেনে নিয়েন, এখন আসুন ১৪ বছর আগের সময়ে ঘুরে আসি।

“ফোরস্টার” একটা গ্রুপের বা দলের নাম। সদস্য আজমল, তুষার, রুবেল, মশিউর। দুরন্ত ও বেপরোয়া চার কিশোরের দল। স্কুলে থাকা কালিন সময়ই তারা এই গ্রুপের জন্ম দেয়। এবং তখন থেকেই তারা বেপরোয়া।

স্কুল শেষ করে একসাথে কলেজে ভর্তি হয় সবাই।
তবে সেখানে যেন তাদের দুরন্তপনা আরো বেড়ে যায়। আর তাছাড়া মশিউর বাদে দলের সকলেরই পরিবার বেশ ধনী। ইচ্ছে মত টাকা উড়ানো, গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি, মাতলামি করা, সব করতো তারা। আর সে সময় দলে থাকা তুষারের সাথে পরিচয় হয় “আরিফুলের” সাথে। অভাবি পরিবারের ছেলে আরিফুল। পারবেকি ফোরস্টারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে?

ফোরস্টার, আর আরিফুল সহ এক বৃষ্টিপূর্ন রাতে ড্রাংক অবস্থায় বের হলো গাড়ি নিয়ে।
আপনারা বুঝতে পারছেন, কি একটা নরক অবস্থা গাড়ির ভিতরে হচ্ছে তখন?

হঠাৎ প্রচন্ড জোরে ব্রেক কষলো গাড়ি। এবং গাড়ির সামনের ঘটনা দেখে সবাই হতভম্ব। তাদের চোখে মুখে ভয়। কি দেখেছিলো তারা?

–ঘোরাঘুরি শেষ, চলুন এখন বর্তমানে ফিরে আসি।

-৫ বন্ধুর সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত।
আজমল সাহেব বড় ব্যবসায়ী। তার প্রভাব প্রতিপত্তিও অনেক। উপর মহলের সবাই চেনে তাকে।

-রুবেল বেসরকারি একটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার টাকার কোনো অভাব নাই। গাড়ি, বাড়ি, নারী সব আছে।

-তুষার আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে এখানেই স্থায়ী হয়ে যান। বিয়ে করেন সে দেশের মেয়ে ক্রিস্টিয়ানাকে। অমায়িক চরিত্রের মেয়ে ক্রিস্টিয়ানা।

-তবে মশিউর শেষ। কারন তার কোনো উন্নতী নেই। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ঘৃন্য উপাধিতে ভূষিত।

-আর আরিফুল বর্তমানে দেশের নাম করা একজন লেখক। এক সময় সুস্থ স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে তিনি পঙ্গু। তার এই পঙ্গুত্বের নিদারুন কাহিনী জেনে সত্যিই পাঠকও কষ্ট পাবেন।
তিনি লেখালেখি করেই বর্তামানে চলেন। পান্ডুলিপি বিক্রি করে ইনকাম বেশ ভালোই হয়। নিজে বাড়ি বানালেন খুব সুন্দর করে। বাড়িতে একজন মাত্র কর্মচারী নিয়েই তার সংসার।

কিন্তু এখন এরা কেউই বর্তমানে শান্তিতে নাই। তার কারন, অজানা কেউ একজন তাদের ফোন হুমকি দিতে থাকে। তাদের কোনো একটা পাপ স্বীকার করে নেয়ার জন্য। সময়ও বেঁধে দেন মাত্র সাত দিন।
কিন্তু তারা কী স্বীকার করবে? কার কাছে স্বীকার করবে?

অদ্ভুদ ফোন কল পেয়ে আমেরিকা থেকে দীর্ষ ১৪ বছর পর তুষার চলে এসেছে এই কারনেই। আর সে আসার পরেই ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা…

খুন হতে থাকে একে একে… এবং নৃশংস ভাবে।

সব গুলো খুনের তদন্তের ভার এসে পড়ে হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটরদের উপর। ‘এসে পড়ে’ না বলে বরং বলা ভালো নেয়া হয়েছে। নিয়েছেন একসময়ের সৎ এবং একরোখা স্বভাবের পুলিশ অফিসার “আবু জামশেদ”
বর্তমানে তিনি পুলিশ থেকে বের হয়ে সরকারি আরেক বিভাগ এই হোমিসাইডে জয়েন্ট করে। দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন কোনো আনসলভড কেস থাকবে না তার এখানে।

নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী “শাহরিয়ার” এবং আরেক নতুন সদস্য “তানভির” কে নিয়ে তিনি চালাতে থাকেন এই তদন্ত। কিন্তু তিনি কি পারবেন? কেনেনা খুনির খুন করার ধরন দেখে মনে হচ্ছে খুনি একজন সাইকোপ্যাথ, সিরিয়াল কিলার।
খুনি প্রতিটা খুনে একটা সংকেত রেখে যাচ্ছে।

কিসের সংকেত? কার জন্য সংকেত রেখে যাচ্ছে? খুনি কী চায়? আবু জামশেদ কি পারবে তাঁর সম্মান, তাঁর দলের সম্মান এবং সেই সাথে হোমিসাইডের ভবিষ্যৎ ধরে রাখতে?

গল্পটি পড়তে পড়তে যখন পাঠক একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাবে এবং বুঝতে পারবে কি হচ্ছে, বা হবে, ঠিক তখনই গল্পের টুইস্ট পাঠককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সব চিন্তাকে এলোমেলো করে দেবে। যেমন ভাবে হতবাক হয়েছেন গোয়েন্দা অফিসার আবু জামশেদ।

প্রেম ভালোবাসা, ঘৃনা, মমতা, রহস্য, কি নেই গল্পে? ৬৫ অধ্যায়ের গল্পটি শেষ হয়েছে ২৬৯ পৃষ্ঠাতে। চমৎকার সুখ পাঠ্য ছিলো সারা বইটি। অন্তত আমি হতাশ না। তবে আক্ষেপ আছে, সেটা হলো কিছু বিষয় আরো পরিষ্কার করে লেখতে পারতেন লেখক।
যেমন আবু জামশেদের জীবনটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার দরকার ছিলো।

লেখক “শরিফুল হাসান” খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখেছেন তাঁর এই “আঁধারের যাত্রী” নামক বইটি। বইটি ২০১৬ সালে ‘বাতিঘর প্রকাশনী’ থেকে বের হয়, মূদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা।

বাংলায় মৌলিক থ্রিলার গল্প বা উপন্যাস লেখা আমার মতে অনেক বড় ব্যাপার আমাদের জন্য। প্রচলিত বাংলা সাহিত্য থেকে আলাদা এই থ্রিলার সাহিত্য। আমাদের দেশে এই সাহিত্যকে অনেকই সাহিত্যের কাতারেই রাখেন না। যেটা খুবই হতাশার।
বাংলার প্রচলিত সাহিত্যের মত না হলেও এই সাহিত্যে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই।
এই সাহিত্যের চর্চা আরো করা উচিৎ। তবে আনন্দের বিষয় বর্তমানে সেই মানের মৌলিক না হলেও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

শরীফুল হাসানের জন্ম ময়মনসিংহে৷ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন৷ থ্রিলারে এসেছিলেন অনুবাদ দিয়ে৷ তার অনুদিত প্রথম বই মেইজ অব বোনস৷ কিছুদিনের মধ্যেই মৌলিক থ্রিলার লেখা শুরু করেন৷ প্রথম উপন্যাস সাম্ভালা দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি, পরবর্তীতে সেটা রূপ নেয় ট্রিলজিতে৷ এছাড়াও ঋভু, আঁধারের যাত্রী, মেঘ বিষাদের গল্প ইত্যাদি বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন তিনি৷ মূলত থ্রিলার হিসেবে লেখা হলেও তার শেষের দিকে লেখা উপন্যাসগুলোকে চট করে থ্রিলার ঘরানায় ফেলে দেয়ার কোনো উপায় নেই৷ কারন বর্তমান তাঁর লেখা গুলোতে থ্রিলারের পাশাপাশি সামাজিক চিত্রও অংকিত হয়। তাই অনেক সময় মনেহয় বাস্তব কোনো ঘটনা পড়ছি।

ধন্যবাদ।
© মোঃ কামরুল হাসান
সময় রাত ১ঃ৩০ মিনিট, ২৫/০৭/২০১৯

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/28700425

ঋভু

রিভিউ

অসাধারণ!! চমৎকার !! নাহ, শুধু এটুকু বললেও কেমন জানি অপূর্ণ থেকে যায় প্রশংসাটা । কোন ফাক ফোকর নেই, এইবার একদম ছক্কা মেরে দিয়েছেন শরীফুল হাসান ভাইয়া । একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এনজয় করেছি বইটা । এরকম বই যে আগে পড়িনি তা না, কিন্ত অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল কারণ এই বই এর লেখক বাংলাদেশী, আর গল্পের প্রয়োজনে যে সকল মিথ ব্যাবহার করা হয়েছে তা ও এই উপমহাদেশীয় । আমাদের নিজেদের দেশ এর গল্প ব্যাবহার করেই যে এত সুন্দর থ্রিলার লেখা যায় তার উদাহরণ আরেকবার দিয়ে দিলেন শরীফ ভাইয়া । J আসলে এটাকে শুধু থ্রিলার বললে ভুল হবে । একই সাথে ফ্যান্টাসী, ঐতিহাসিক ও আডভেঞ্চার এর মিশ্রন । আর অনেক সময়ই একটা বই এ এতগুলা জনরা এর মিশ্রণ করতে গেলে কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে যায়, তবে এই বই এর ক্ষেত্রে লেখক তা একদম দক্ষ হাতে সামলেছেন । সাম্ভালা ট্রিলোজীর তুলনায় এই বই এর ক্ষেত্রে সংলাপ এর ভঙ্গী অন্নেক সাবলীল লেগেছে আমার কাছে । একটানা পড়ে যেতে সমস্যা হয় নি একটু ও ।

দুটো টাইমলাইনে তিনটা আলাদা আলাদা গল্প সামনে এগিয়ে গিয়েছে সমান্তরালভাবে । এর সাথেও একটু পর পর বিভিন্ন ঘটনার ফ্লাশব্যাক তোহ ছিলই । বাংলাদেশ বারমা সীমান্তের কাছে একটা গোপন ল্যাব । পাহাড়ের তলে সেই ল্যাব এ চলছে এমন একটা পরীক্ষা যা সফল হলে বদলে যাবে পুরো পৃথিবীর নকশা । এই পরীক্ষার পেছনে আছে একটা ভয়ঙ্কর সংগঠন । আরেকটা গল্পে দেখা যায় একজন ভারতীয় তরূণ পা রেখেছে বাংলাদেশে । তার ও আছে একটা মিশন । কিন্তু ঢাকায় নামার পর থেকেই তার পেছনে লোক লেগে যায় । শুরু হয় পালানো । গল্পের আরেক টাইমলাইনে দেখা যায় দুই ঐতিহাসিক চরিত্র চাণক্য এবং স্বয়ং সম্রাট অশোককে। বই এর অনেকটা অংশ জুড়েই আছে সম্রাট আশোকের ছোট থেকে বড় হয়ে রাজ্য জয়ের কাহিনী । এই যে অশোক মৌর্য সম্রাজ্যকে এতটা বিস্তার করতে পেরেছিলেন, এর পিছনে কি ছিল শুধুই তার বিচক্ষণতা, নাকি তাকে সাহায্য করেছিল অন্য কোন রহস্য । এর পুরোটা জানতে হলে বইটা পড়তে হবে ।

অনেকগুলো গল্প একসাথে এগিয়ে নিয়ে শেষে একই সুতায় মেশানো হয়েছে। তবে কোন প্রকার অসঙ্গতিই চোখে পড়েনি এবার। আর ফিনিশিং নিয়েও কোন আক্ষেপ নেই । বরং তা দেখে মনে হয়েছে যে সামনে হয়ত আরো বাড়তে পারে এই গল্প । শরীফুল হাসান ভাইয়া কে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা বই উপহা দেয়ার জন্যে। অপেক্ষা স্বার্থক। J

এই বছর বাতিঘর থেকে যে বই গুলো বের হয়েছে তার প্রতিটাই কোন না কোন দিক থেকে মুগ্ধ করেছে আমাকে । মৌলিক থ্রিলার গুলো হাটি হাটি পা পা করে এখন অনেকটাই পরিণত । J অথচ কিছুদিন আগেও এটা চিন্তা করা যেতনা । বাতিঘরকেও ধন্যবাদ ।

রিভিউঃ সালমান হক, Feb 19, 2015

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/24799873

মেঘ বিষাদের গল্প

রিভিউ

এক টুকরো মেঘ, এক গুচ্ছ বিষাদ, অত:পর একটি গল্প

এবারের গল্প মেঘের গল্প, অথবা কোন রৌদ্রকোজ্জ্বল দিনের। এবারের গল্প কিছুটা বিষাদ অথবা বিষাদহীনতার গল্প, অনুভূতি বা অনুভূতিহীনতার গল্প, আনন্দ ও ট্র্যাজেডির গল্প, প্রেম ও বিচ্ছেদের গল্প, বন্ধুত্ব ও বন্ধুত্বহীনতার গল্প। এবারের গল্প দু’টি পরিবারের গল্প, পরিবারদ্বয়কে ঘিরে কিছু মানুষের গল্প, মানুষে মানুষে সম্পর্কের গল্প। সাধ এবং সাধ্যের গল্প, সম্পর্কে সম্পর্কে টানাপোড়েনের গল্প, প্রেম-ভালবাসা-প্রীতির গল্প। এবারের গল্প অপরাধ ও অপরাধবোধের গল্প, হত্যা এবং প্রতিশোধের গল্প, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী, রাজা অথবা নীতির গল্প। সব মিলিয়েই এক আশ্চর্য প্যাকেজ শরীফুল হাসানের “মেঘ বিষাদের গল্প” উপন্যাসটি।

কাহিনীর শুরু হয় শাওন নামের এক যুবককে দিয়ে। আগাগোড়া বোহেমিয়ান, বাউন্ডুলে স্বভাবের যুবক শাওন বাইরে থেকে বাসায় ফিরে দেখে তার ছোটমামা ড্রইং রুমে বসে আছেন। ছোটমামা শাওনকে বলেন তার মায়ের কাছ থেকে তার ব্যাপারে জরুরী কিছু সিদ্ধান্ত শুনে নেয়ার জন্য। পিতৃহীন পরিবারে মায়ের ছোট ভাই এই মামা-ই অনেকটা অভিভাবক স্বরূপ। মামার দেয়া সিদ্ধান্তটাও শাওনের জীবনে বেশ অভাবনীয়। মায়ের কাছে সেটা শুনে শাওন খুব বিস্মিত হয়। এভাবেই কাহিনীর শুরু। তারপর ধীরে ধীরে কাহিনীতে আগমন ঘটে রেনু, বাদল, বৃষ্টি, মিন্টু, রিন্টু, মান্নান, জসিম, হায়দার, শায়লা, আম্বিয়া বেগম, মজনু মিয়া, সমীরন, মনির, কাশেম, তৃণা এমন অনেকের। আরো একজনের আগমন ঘটে। ছোট্ট নিধির। যে চরিত্রের কোন পার্থিবতা নেই, গল্পে কোন বিস্তার নেই কিন্তু উপন্যাসের কেন্দ্রীয় এক চরিত্র এই নিধি।

শাওনের চরিত্রের সাথে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ততোধিক জনপ্রিয় চরিত্র হিমুর যথেষ্ট মিল ছিলো। মনে হয়েছে লেখক হিমুর কথা মাথায় রেখেই শাওনের চরিত্রায়ন করেছেন। বোহেমিয়ান, ঘরছাড়া, বন্ধনহীন, ভাবনাহীন, রোজগারহীন এক অভাবনীয় চরিত্র। তেমন কোন কাজ নেই, চিন্তা নেই, যার কাজ রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়ানো। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ছাড়া এমন চরিত্র পাওয়া দূর্লভ। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলা চলে এই শাওনকেই। যাকে ঘিরেই সৃষ্টি হয় আরো নানা পার্শ্ব চরিত্রের, নানা ঘটনার, মেঘ বিষাদের গল্প।

কাহিনীর গতি খুব সাবলীল। পেছনের কাভারে লেখা “গল্পটা হয়তো আনন্দের কিংবা প্রতিশোধের” বাক্যটি পড়া থাকায় প্রথম থেকেই একটা থ্রিলিং ফিল হতে থাকে। প্রথম দিকে সারাক্ষনই এক প্রশ্ন- এ গল্প কিসের প্রতিশোধের গল্প? যেহেতু প্রতিশোধের গল্প, তাহলে নিশ্চই কোথাও কোন হত্যা কিংবা কিডন্যাপ কিংবা জালিয়াতি অথবা বিশ্বাসঘাতকতার ধোয়াশা আছে। যদিও সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য পাঠককে অপেক্ষা করতে হবে বেশ। কাহিনীর কিছুটা গভীরে গেলেই প্রকাশিত হয় দুর্দান্ত এক ষড়যন্ত্রের প্লট।

অপরাধ, সন্ত্রাস, রাজনীতি, হত্যাকান্ড, বিশ্বাসঘাতকতা এতোকিছু থাকা সত্বেও কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বইটিকে থ্রিলার জনরাতে ফেলা যায়না। এ যেন থ্রিল থাকা সত্বেও ঠিক থ্রিলায় নয়, হইয়াও হইলোনা থ্রিলার একটা ভাব। মনের মাঝে এক চাপা অস্বস্তি। এটা কি থ্রিলার? নাকি আমাদের সমাজের কঠিন বাস্তবতা।

লেখকের গল্প বলার ঢং খুব মনোমুগ্ধকর। সহজ, সরল, দ্যোতনা জাগানিয়া, আবেগী। চরিত্রায়ন, দৃশ্যায়ন গুলো লাগছিলো অতি পরিচিত। যেন আমার আশেপাশেই সব ঘটছে, পুরো বইটি পড়ার সময় এমন এক অনুভূতি কাজ করছিলো ভেতরে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বিভিন্ন চরিত্রের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোর বর্ণনা। যেগুলো বেশ কাব্যময় করেছে উপন্যাসের পাতাগুলোকে।

বইয়ের মতো প্রচ্ছদও মনকাড়া। পাখিগুলো যেন সত্যিই পাঠককে মেঘ বিষাদের কোন গল্প শোনাতে এসেছে। উপরে রক্তাক্ত সূর্যটি যেন আমাদের পচা-গলা-রক্তাক্ত সমাজেরই প্রতীক।

আর বেশী কিছু বলবো না। এক কথায় দুর্দান্ত পাঠ। শরীফুল হাসানের সাম্ভালা পড়েই তাঁর ভেতর সম্ভাবনার দীপ্তি দেখা গিয়েছিলো। এই বইখানা পড়ে সেই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হলো। আশা করি লেখকের কাছ থেকে আমরা পাঠকেরা এমন আরো অনেক দ্যোতনা জাগানিয়া উপন্যাস পাবো।

গ্রন্থ পরিচিতি

নাম: মেঘ বিষাদের গল্প (উপন্যাস)
লেখক: শরীফুল হাসান
প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা, ২০১৭
প্রচ্ছদ: ডিলান
পৃষ্টা: ১৯১
মূল্য: ২০০ টাকা

রিভিউঃ Sami Choudhury, Mar 17, 2017

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/34145958

অন্ধ জাদুকর

রিভিউ

সালাম, মা বাবা হীন এতিম এক ছেলে যে কিনা মামার সাথে তাদের গ্রামের বাড়িতে থাকে। হঠাৎ এক অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার কারনে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সে। শুরু হয় তার পলাতক জীবন।

এদিকে দেশের আরেক প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে থাকেন মুরশেদ মিয়া নামক একজন বৃদ্ধ মানুষ, যার অতীত হলো রহস্যে ঘেরা । কিন্তু পথের ভিতরেই হাতে পড়েন এক অদ্ভুত আততায়ীর।

ঢাকার এক ইউনিভার্সিটির নতুন শিক্ষক ডঃ কামাল আরেফিন, প্রাচীন ভারত ও যাদুবিদ্যা নিয়ে যার আগ্রহ অনেক। তার বাবার অতীতও রহস্যে ঘেরা। তাই তিনি খোঁজা শুরু করেন তার বাবার আসল পরিচয়, জানতে পারেন আশ্চর্যজনক কিছু সত্য ।

আরেকদিকে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে দিল্লিতে দেখা পাওয়া যায় এক ভয়ঙ্কর গুপ্তসংঘের। সে গুপ্তসংঘের লোকজনকে এতদিন পরে আবারো দেখা যেতে থাকে ঢাকার রাস্তায়।

এখন সালামের পলাতক জীবনের শেষ পরিণতি কি? নিয়তি তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? মুরশেদ মিয়ার অতীত কি? দিল্লির গুপ্তসংঘের আসল কাজ কি? ডঃ কামাল আরেফিন এর বাবা আসলে কে? এ সবকিছু ছাড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন “মৃত্যুর মহান জাদুকর” আসলে কি জিনিস
? তা কি মিথ না বাস্তবতা? এ সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে লেখক শরীফুল হাসানের ফ্যান্টাসি থ্রিলার ধারার “অন্ধ জাদুকর” – বইটিতে।

অন্ধ জাদুকর পড়ার পরে প্রথম যে অনুভূতি মাথায় আসে তা হলো এর কাহিনী যেমন জাদু এবং জাদুকরদের ঘিরে , লেখনীও সেরকমের ম্যাজিক্যাল। কাহিনীর বুনোট এতই ভালো যে একবার গল্পের ভিতরে ঢুকে গেলে শেষ না করে উঠা যায় না। লেখকের এর আগের পড়া প্রিয় বই সাম্ভালার ধাঁচের লেখা যেহেতু, পড়তে তাই দারুন লেগেছে।

অন্ধ জাদুকর বইটির চরিত্রের ভিতরে গল্পের মূল প্রোটাগনিস্ট সালাম হলেও মুরশেদ মিয়ার ব্যাকস্টোরি এবং চরিত্র সবচেয়ে আকর্ষনীয় লেগেছে। লেখকের এর আগের সাম্ভালা সিরিজের একটি চরিত্র আছে এতে। বেশ কিছু ধরনের জাদুকরদের আলাদা আলাদা পার্সোনালিটি তৈরি করায় বেশ সময় নিয়েছে বইটি। তবে সবচেয়ে চমক রয়েছে বইয়ের টাইটেল ক্যারেক্টার “অন্ধ জাদুকর” কে এ বিষয়ে।

অন্ধ জাদুকর এর আরেক আকর্ষণীয় দিক এর ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং। “মৃত্যুর মহান জাদুকর” নামের এক মিথ, বেশ কিছু গুপ্তসংঘ, নানা ধরনের অবিশ্বাস্য জাদুকরী ক্ষমতার দারুন বর্ণনা এ বইয়ের বিশাল প্লাস পয়েন্ট। তবে কাহিনী অনুসারে যে পরিমান একশন এবং জাদুবিদ্যার প্রদর্শন দেখতে চেয়েছিলাম সেটি কিছু পরিমান কম রয়েছে।

অন্ধ জাদুকর এর কাহিনী নন লিনিয়ার হলেও চমৎকার লেখনীর কারণে কোন জায়গায় আটকানো লাগেনি তবে পিরিয়ড ড্রামা বলে কিছু জায়গায় কন্টিনিউটির সমস্যা দেখতে পেয়েছি। তবে বইটি সম্পর্কে আমার সবচেয়ে বড় আক্ষেপ “শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ” টাইপের ফিনিশিং। কিন্তু লেখক ঘোষণা দিয়েছেন এটি আসলে একটি ট্রিলজির প্রথম পার্ট, তাই সব কিছুর উত্তর আসলে ট্রিলজি শেষ হবার পরে পাওয়া যাবে।

অন্ধ জাদুকর এর টেকনিক্যাল দিক থেকে ধরতে গেলে বইটির প্রোডাকশন এর দামের তুলনায় বেশ উন্নতমানের, বানান ভুল বা প্রিন্টিং মিসটেক খুব একটা চোখে পড়েনি । বইটির আরেক প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এর প্রচ্ছদ যা কাহিনীর হিসেবে একদম পারফেক্ট এবং বইটিকে আরো দারুণভাবে প্রেজেন্ট করেছে, এ কারণে প্রচ্ছদশিল্পীকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়।এছাড়াও বইয়ের বাধাই, কাগজের মান, প্রিন্ট এ সব কিছুই বেশ সন্তোষজনক।

এক কথায়, সাম্ভালার পরে লেখক শরীফুল হাসানের আরেক দারুন সিরিজের সূচনা হলো “অন্ধ জাদুকর” এর মাধ্যমে। দেশীয় ঘরানার ফ্যান্টাসি থ্রিলার পড়তে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য মাস্ট রিড, বাকিদের জন্যও হাইলি রিকোমেন্ডেড। এই সিরিজের পরবর্তী বইগুলো পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।

রিভিউঃ Zahidul, Feb 23, 2021

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/51250804

রাত্রি শেষের গান

রিভিউ

মাইনুল,একজন মোটর মেকানিক। স্ত্রী জয়নাব আর মেয়ে ফুলিকে নিয়ে টানাটানির সংসার। একদিন রাতে বাড়ি ফিরে দেখে মেয়ের অনেক জ্বর। ডাক্তার দেখানো লাগবে কিন্তু পকেটে নাই টাকা। টাকার জন্য হাত পাততে বের হয়ে যায় সে। কেউ তাকে সাহায্য করে না। হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় এক ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটি হয় মাইনুলের। সব হতাশা আর ক্রোধ ওই লোকটার ওপর মেটায় মাইনুল। পরের দিন সেই জায়গায় লোকটার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ফেঁসে যায় মাইনুল। খুনটা কি সে করেছে নাকি লুকিয়ে আছে কোন এক রহস্য???

আরিফ সামাজিক জীবনে চরম ব্যর্থ এক পুলিশ অফিসার। তার কাঁধে এসে পড়ে এ কাজের ভার। কানাগলি এক খুনের রহস্য। খুনিকে খুঁজতে তাকে সাহায্য করে আরেক অফিসার হাফিজ। খুনিকে খুঁজতে গিয়ে বের হয়ে আসে এক রহস্য।

ভালোবাসা, সামাজিক সমস্যা, দারিদ্রতা ,ক্রোধ আর লোভের সংমিশ্রনে শরিফুল হাসানের থ্রিলার রাত্রি শেষের গান। মাত্র ১২৮ পেজের বইটা শেষ না করে উঠা কঠিন। বেশ কিছু টুইস্ট আর সাসপেন্স এর কম্বিনেশনের দারুন এক মার্ডার মিস্ট্রি হচ্ছে রাত্রি শেষের গান। চরিত্রগুলাও অসাধারণ। অপরাধী মাইনুল এর জন্য মায়া লেগেছে পড়তে যেয়ে। আবার ইন্সপেক্টর আরিফের চরিত্রটা প্রশংসার যোগ্য দাবিদার। তার চরিত্রটা অনেকটা সপ্তরিপুর বাশারের মতই দুর্দান্ত। ভালো লেগেছে ব্যাপারটা। সবথেকে বড় কথা একটা মার্ডার মিস্ট্রি অথবা থ্রিলারের থেকেও বেশি কিছু হচ্ছে রাত্রি শেষের গান। রহস্য ,আবেগ , ভালোবাসা আর হতাশার গল্পে ডুব দিতে চাইলে বইটা মিস করা উচিৎ হবে না। রেটিং ৫/৫।

রিভিউঃ Ishraque Arnob, Jul 09, 2018

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/38255012

যেখানে রোদেরা ঘুমায়

রিভিউ

বইঃ যেখানে রোদেরা ঘুমায়
লেখকঃ শরীফুল হাসান
প্রকাশকঃ চিরকুট
প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ঘরানাঃ সমকালীন উপন্যাস
প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী
পৃষ্ঠাঃ ৩০৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা
ফরম্যাটঃ হার্ডকভার

কাহিনি সংক্ষেপঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক মফস্বল শহর মির্জাপুর। এই শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী যুবক ইফতেখার উদ্দিন রুপু। মির্জাপুরের এমপি জামাল খন্দকারের মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সমস্তটাই নিয়ন্ত্রণ করে রুপু। ওর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শফিক ও মিলন। পুরো মির্জাপুর জুড়ে রুপু’র অনেক সম্মান। না, ভয়ে না। মানুষ সত্যিই তাকে ভালোবাসে, সমীহ করে। মানুষ খুন করতে এতোটুকুও হাত না কাঁপা রুপু যতো ভয়ঙ্করই হোক না কেন, নিজস্ব কিছু নীতিতে সবসময়ই অটল থাকে সে।

অনিন্দিতা হোসেনকে তার কাছের মানুষরা চেনে অনি নামে। মেয়েটা মির্জাপুর কলেজের ছাত্রী। ডাকসাইটে উকিল সাজ্জাদ হোসেনের একমাত্র মেয়ে সে। মেয়েটা যেদিন প্রথম রুপুকে দেখলো, সেদিন থেকেই যেন রুপু জায়গা করে নিলো ওর মনে। এদিকে রুপুও মজে গেলো অনি’র সুন্দর দুই চোখের মায়ায়। সারাজীবন পিস্তল, মাদক আর খুনোখুনি নিয়ে পড়ে থাকা দুঃসাহসী রুপু অনি’র প্রেমে পড়লো। শুরু হলো নতুন এক গল্প।

নিবিড় কবিতা লেখে। পছন্দ করে সহপাঠী অনিকে, কিন্তু বলতে পারে না। নতুন নতুন অনেক বন্ধু জুটেছে ইদানীং তার। আর তাদের হাত ধরেই নিবিড় জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ বিভ্রান্তি আর অন্ধকারে পরিপূর্ণ এক জগতের সাথে। নিজেকে বোঝার ও খোঁজার চেষ্টা করতে এসে কবি নিবিড় ধীরে ধীরে কোথায় হারাতে লাগলো, তা সে নিজেও বুঝতে পারলো না।

এদিকে মির্জাপুরের রাজনীতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। রুপু, শফিক আর মিলন এটা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে। জামাল খন্দকার আর তার মাস্টারমাইন্ড সহযোগী মানিক মিয়া কোন খেলার ছক কষছে? বহুদিন আগে মির্জাপুর থেকে বিতাড়িত শাহান আবারো কেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো? আর এই সমস্ত কিছু ছাপিয়ে যে অনিশ্চয়তাটা রুপু’র জীবনে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগলো তা হলো অনি’র সাথে ওর মিলন।

মির্জাপুরের কিংবদন্তিতুল্য যুবক ইফতেখার উদ্দিন রুপু’র অভাবনীয় উত্থান-পতনে ভরা উপাখ্যানে বাকি আছে আরো অনেক কিছুই।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ নব্বই দশকের এক মফস্বল শহরকে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছে শরীফুল হাসানের ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’ উপন্যাসের কাহিনি। সুলেখক শরীফুল হাসান এর আগেও থ্রিলার ঘরানা থেকে বেরিয়ে ‘মেঘ বিষাদের গল্প’, ‘জনারণ্যে একা কয়েকজন’ ও ‘ছায়া সময়’-এর মতো ভিন্নধর্মী সমকালীন ও সামাজিক উপন্যাস তাঁর পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এলো ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’।

বেশ সহজ-সরল ভাবে শুরু হয়েছে গল্পটা। এটাকে শুধুমাত্র রুপু নামের অকুতোভয় ও বেপরোয়া এক তরুণের জীবন পাল্টে দেয়া উপাখ্যান বললে ভুল বলা হবে৷ বরং ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’-কে নব্বই দশকের পুরো একটা মফস্বল শহরের বুকের ভেতরের গল্প বললেই যথাযথ হয়৷ যা আবর্তিত হয়েছে রুপুকে কেন্দ্র করে, কিন্তু ছুঁয়ে গেছে এই গল্পের সব চরিত্রের ভেতর আর বাহিরকে। প্রেম মানুষের জীবনকে কিভাবে আর কতো রকম ভাবে পরিবর্তিত করে দিতে পারে, তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। কিছু কিছু প্রেম কাহিনি দীর্ঘদিন মনের গভীরে থেকে যায়। অনি-রুপু’র প্রেম কাহিনিটাও আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে।

এই উপন্যাস থেকে বেশ পরিস্কার একটা ধারণা পেয়েছি নব্বই দশকের লোকাল পলিটিক্স সম্পর্কে। শাহান, জামাল খন্দকার ও মানিক মিয়ার মতো চরিত্ররা মূল গল্পে বেশ গভীর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলো৷ বইটা শেষ করার পর নিবিড় চরিত্রটার জন্যও সৃষ্টি হয়েছে গভীর দুঃখবোধ। ভালো লেগেছে রুপু-শফিক-মিলন ত্রয়ীর নিষ্কলুষ বন্ধুত্ব। সব মিলিয়ে ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’ ছিলো প্রেম, বন্ধুত্ব, সংঘাত, বিশ্বাসঘাতকা আর প্রতিশোধের এক অসাধারণ উপন্যাস।

নব্বই দশকের আবহ চমৎকার ভাবে এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন শরীফুল হাসান। তাঁর চমৎকার গল্প বলার ধরণের কারণে একটাবারের জন্যও বিরক্তি আসেনি বইটা পড়তে গিয়ে। বইটা প্রকাশের আগে থেকেই আলাদা এক ধরণের আগ্রহ কাজ করছিলো আমার মধ্যে। আর পড়ার পর একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, হতাশ হইনি। মন খারাপ লাগছে। কেন, সেটা বলতে চাই না। এই মন খারাপ ভাবটা কতোক্ষণ থাকবে, জানি না। দুই-একটা টাইপিং মিসটেক পেয়েছি এই বইয়ে। শরীফুল হাসানের উচিৎ এমন ভিন্নধর্মী উপন্যাস নিয়ে আরো কাজ করে যাওয়া।

সজল চৌধুরী’র করা ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’-এর প্রচ্ছদটা এতোটাই চমৎকার লেগেছে যে আমার ধারণা যারা সচরাচর বইপত্র পড়ে না তারাও বইটা কোথাও দেখলে একবার হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে আগ্রহী হবে। নিঃসন্দেহে তাঁর সেরা কাজ গুলোর একটা এই বইয়ের প্রচ্ছদ। চিরকুটের নান্দনিক প্রোডাকশন নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু দেখছি না। কাগজের মান, বাঁধাই আর মূল্য নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। আমি সন্তুষ্ট।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব কম বই-ই মানুষকে রিকমেন্ড করি ইদানীং। তবে এই বইটা রিকমেন্ড করবো৷ ‘যেখানে রোদেরা ঘুমায়’ আশা করি হতাশ করবে না।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.০৩/৫

#Review_Jekhane_Rodera_Ghumay

~ শুভাগত দীপ ~

(২০ অক্টোবর, ২০২০; নাটোর)

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/55290500

রূপকুমারী ও স্বপ্নকুহক

রিভিউ

আমার মতে কিছু উপাদান না থাকলে একটা সাইকোলজিকাল হরর বইকে ভালো বলা যায় না।
প্রথমত: গল্পের যে রহস্য, তার উৎস হতে হবে মানুষের অবচেতন মন, বা মানসিক সমস্যা। তার মানে এই না যে সবসময় ‍টুইস্টে দেখাতে হবে পুরোটাই কারো ভ্রম ছিলো, বা স্বপ্ন ছিলো, বিভ্রান্তি ছিলো। তবে রহস্যের শেষ সেখানে না হলেও, শুরুটা অবশ্যই হবে মানসিকতায়। সমস্যা হতে হবে জটিল, কারণ সব মানুষের মনই জটিল। সমস্যাটা হতে হবে এমন যা দেখে মনে হয় অস্বাভাবিক, কিন্তু অসম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত: বাস্তবতা এবং অবাস্তবের সীমানা দুর্বল করে দিতে হবে। ভালো সাইকোলজিকাল হরর গল্পে যেকোনো একজন প্রধান চরিত্রের অন্তত এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে যেটা ‘সাধারণ’ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা সবাই পাগল, কিন্তু একজন চরিত্র থাকবে যার মানসিকতাকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছে তার ব্যাধি। অন্য সবাই যে পৃথিবীকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে, এই চরিত্র সেই পৃথিবীর ছায়াতে হাঁটে, তার মুখোশের আড়ালে দেখতে পায়। খুব ভালো সাইকোলজিকাল হরর গল্পে পাঠক এমন চরিত্রের চোখ দিয়ে কিছুক্ষণ হলেও পৃথিবীকে দেখতে পান, তার মতো চিন্তা করবার সুযোগ পান।
তৃতীয়ত: ভয়ের ঘটনাগুলো যেন আবছা থাকে, অস্পষ্ট থাকে। দরজার ফাঁকে উঁকি দিয়ে মেঝেতে রক্তের ছিটে দেখার মতো। চোখের সামনে গরুর গলায় ছুরি চালানো দেখার মতো নয়। মানুষের মনে বেশিরভাগ ভয় জন্মায় অনিশ্চয়তা থেকে। ভালো লেখকেরা পাঠকের মনে এই অনিশ্চয়তা তৈরি করতে জানেন, সেটাকে ধরে রাখতে জানেন।
আর শেষের ‍উপাদানটা হচ্ছে মনুষ্যত্ব। খেয়াল রাখতে হবে যেন অস্বাভাবিকের ভীড়ে পাঠক হারিয়ে না যায়। চরিত্রদের মধ্যে যেন মানবিক সম্পর্ক থাকে, অসম্ভব পরিস্থিতিতে তারা যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে সেগুলো যুক্তিসঙ্গত না হলেও, যেন বোধগম্য হয়।
শরীফুল হাসানের বই রূপকুমারী ও স্বপ্নকুহকে এই সবগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। বইটা পড়া শুরু করেছিলাম গতকাল রাতে। আজ সকালে শেষ করলাম। চমৎকার সহজ লেখার ভঙ্গি। না, শুধু সহজ বললে বোধহয় ঠিক হবে না। শরীফ ভাই এমন ভঙ্গিতে লেখেন যেন ঘটনাগুলো অনেক আগে তিনি নিজের চোখে ঘটতে দেখেছেন। এখন শ্রোতা পেয়ে খুলে বলছেন সবকিছু। তার লেখা পড়লে মনে হয় ঠিক এভাবেই সব হবার কথা ছিলো, আর এভাবেই হয়েছে।
এবার একটু কথা বলি কামরার কোণায় দাঁড়ানো হাতিটাকে নিয়ে। শুরুর দিকে ফেলুদার গল্প পড়তে গিয়ে মানুষ যেমন বার বার শার্লক হোমসের সাথে তুলনা করেছে, আহমেদ করিমের সাথে মিসির আলির তেমন তুলনা আসবেই। আর কিছু না হলেও তাদের পেশার কারণে আসবে। তবে আমার ধারণা সময়ের সাথে ফেলুদা যেমন হোমসের ছায়া পেরিয়ে নিজেই আইকনে পরিণত হয়েছে, হোমস যেমন পেরিয়েছে দুপঁ’র ছায়া, তেমনি সহজেই করিম সাহেব মিসির আলির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসবেন।
এবং সে কারণেই এই চরিত্রকে নিয়ে আরো বই দরকার। আমি আরো জানতে চাই আহমেদ করিমের ব্যাপারে, তার অতীতের ব্যাপারে। কেন সে এই নিঃসঙ্গ জীবন কাটায়? কী ভয়াবহ, অবিশ্বাস্য সব ঘটনা তাকে নিয়ে এসেছে বর্তমান পেশায়? কোনটা হবে তার সবচেয়ে কঠিন কেস?
উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। লেখক যে রহস্যময় জগৎ তৈরি করেছেন, সেখানে প্রথম ভ্রমণটা শ্বাসরুদ্ধকর ছিলো। পরেরগুলো নিশ্চয়ই হবে আরো চমৎকার।

রিভিউঃ তানজীম রহমান। Jan 25, 2020

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/50238127

জনারন্যে একা কয়েকজন

রিভিউ

কিছু কিছু বই থাকে সেগুলো পড়ার পর মনের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়। কিসের যেন শূন্যতা এস ভর করে। কিসের যেন আক্ষেপ।কিসের যেন না পাওয়া। সম্ভবত আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গিয়ে এক হয়ে যায় বলেই বইয়ের সেই গল্পের মজাহ এত হাহাকার আর আক্ষেপ খুঁজে পাই। “জনারন্যে একা কয়েকজন” সেই রকমই একটা বই ।বইটা পড়ার পর কিছুক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম। বলা ভালো মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত এই মন খারাপটাই উপভোগ করছিলাম।আরেকটা বই পড়া শুরু করার আগ পর্যন্ত এই রেশ যাবে না। পৃথিবীর ৯০ ভাগ মানুষের আসলে চয়ায় পাওয়া খুব অল্প। কিন্তু বিধাতা কোন এক অজানা কারণে এই মানুষগুলোর চাওয়া পাওয়া গুলো অপূর্ণ রাখে। কিন্তু যে ১০ ভাগ মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই বিধাতা তদের দুই হাত ভরে দেয়। যত চায় তত দেয়। আরো দেয়……… আরো দেয়।
কয়েকজন অল্প চাওয়া মানুষকে নিয়ে রচিত হয়েছে “জনারন্যে একা কয়েকজন”।তাঁদের হয়তো খুব বেশি চাওয়ার নেই কিন্তু ভাগ্য দেবী যে তাঁদের প্রতি সদয় না। এর কারণ সম্ভবত বিশাল এই জনারন্যে আমরা প্রত্যেকটা মানুষই একা। আমাদের চাওয়ার যেমন কোন মিল নেই তেমনি আমাদের সেই অনুপাতে পাওয়ারও মিল নেই। প্রত্যেক আলদা মানুষ তাই দিন শেষে না পাওয়ার হাহাকারে ভোগে ।আর সে কারনেই দেখা যায় চারপাশে মানুষের ভীড়ের মাঝেও আমরা সবাই একা।

বইয়ের কাহিনী আসলে খুব সরল। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব। তাঁদের পরিবার আর সেইসাথে তাঁদেরকে ঘিরে থাকা কিছু মানুষের। গল্পটা তাঁদের ভালোবাসার। তাঁদের চাওয়া পাওয়ার। আর দিনশেষে তাঁদের পাওয়া ,না পাওয়ার।

বইটা ভালো লাগার অন্যতম কারণ বইয়ের গল্প বলার ধরণ আর সেইসাথে শরীফুল ভাইয়ের লেখনী। সমকালীন থ্রিলার কে শরীফুল ভাই অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। যার শুরুটা হয়েছিল “মেঘ বিষাদের গল্প” দিয়ে।
আশা করি ভাই এই জনরায় আরো লিখবেন।

রিভিউঃ নজরুল ইসলাম। Feb 18, 2018

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/38491688

কিংকর্তব্যবিমূঢ়

 

রিভিউ

লেখকঃ শরীফুল হাসান
প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী
মূদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা।
অবসর প্রকাশনা সংস্থা
.
.
কাহিনী সংক্ষেপঃ

আহমেদ করিমের কাছে স্বামী সায়েম চৌধুরির মানসিক সমস্যা নিয়ে হাজির হলো তানিয়া চৌধুরি। সায়েম চৌধুরি নানাধরনের হেলুসিনেশনে ভুগছে।এছাড়া অফিসেও নানা রকম ঝামেলা চলছে। তাই সবধরনের কাজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে তারা চলে যাচ্ছে সায়েমের পৈত্রিক বাড়িতে। আহমেদ করিম আর তার সহকারি সোহেলকেও আমন্ত্রণ জানানো হলো সেই বাড়িতে। আহমেদ করিম সোহেলকে সাথে নিয়ে রওনা দিলেন, সাথে যোগ হলো এক অদ্ভুত চরিত্র রকেট।
সায়েমের পৈত্রিক বাড়ি নিয়ে নানা রকম মিথ, গল্পকথা ছড়িয়ে আছে। সায়েম কিংবা তানিয়া কেউই ঠিক স্বাভাবিক নয়। এমনকি স্বাভাবিক নয় এখানকার কেয়ারটেকারও। এখানে এসে একের পর এক অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন হতে থাকলেন আহমেদ করিম।
ঘটনার জালে জড়িয়ে এই প্রথমবারের মতো নিজেকে আবিষ্কার করলেন কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায়।
.
…………………………………………………………………………………………………………
.
রুপকূমারী ও স্বপ্নকুহক ( ২০২০) এর পর আহমেদ করিম সিরিজের দ্বিতীয় বই কিংকর্তব্যবিমূঢ় । অবে সিরিজ বলতে কিন্তু একই কাহিনীর ধারাবাহিকতা না, বরং মূলত মূল চরিত্র প্রতিটা বইয়ে একই বলে এটা সিরিজ হিসেবে আখ্যায়িত। তাই প্রতিটা বই আলাদা করেও পড়া যাবে।
যাই হোক, কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর শুরুতেও আগের বইয়ের মতো আহমেদ করিম ও তার সহযোগী সোহেল এক প্রাচীন জমিদার বাড়িতে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হোন। একটা আধিভৌতিক আবহে গল্প শুরু হয়, যেটা প্রথমে সাদামাটাই মনে হতে পারে। কিন্তু পুরোটাই যে ভ্রম! যতোই সামনে আগানো হয়, বাড়ে জটিলতা। গোলকধাঁধায় অন্ধের হাত দেখার মতো অসহায় অবস্থায় বিপর্যস্ত মনে হয় আহমেদ করিম সাহেবকে। কিন্তু কেন?
বেশ কিছু জোরালো প্রশ্ন এবং সেই সাথে মনস্তাত্বিক কিছু রহস্যের উপস্থিতিতে অবস্থা আরও জটিল হতে থাকে। এসব থেকে বেঁচে ফেরার উপায় কী?
সহকারী সোহেল যথারীতি বোকাটে, খামখেয়ালী এক চরিত্র। গল্পের ক্ষেত্রে তা খারাপ লাগে না কখনোই। সাথে যুক্ত হয়েছে ‘রকেট’ নামের এক আজব চরিত্র।
চরিত্র গঠন এবং পরিবেশ-আবহ উপস্থাপনে মুন্সিয়ানা ষোলআনা। সিরিজের আগের বইয়ের থেকে এই বইতে ভৌতিক বা অতিপ্রাকৃত ব্যাপারগুলর বিবরণ আরও ভয়াবহ ছিল, বেশ গা শিউড়ে ওঠার মতো। অদ্ভুত ভুতুড়ে বাড়ির কেয়ারটেকার হামজা মিয়ার অদ্ভুত চলাফেরা এবং বাড়ির পুরনো ইতিহাস, তানিয়ার স্বামীর অদ্ভুত ভয়ানক দুঃস্বপ্ন, তানিয়ার অদ্ভুত আচরণ… সেইসাথে আহমেদ করিম সাহেবের বুদ্ধির জোরদার খেলটাও শেষদিকে দারুনভাবে সফল। তবে হিন্দু জমিদারের অতীত ইতিহাস পড়তে খারাপ লাগছিল না। আরেকটু বিস্তারিত পড়তে মন চায় L
যুক্তি-অযুক্তির খেলায় শেষে কে জয়ী হবে? আহমেদ করিম সাহেবের ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী?
সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ্য এক বই। আধিভৌতিক এবং একই সাথে মনস্তাত্বিক আখ্যানের এক সফল উদাহারণ বলা যায় ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ বইটিকে। পরের বইয়ের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম। হ্যাটস অফ প্রিয় শরীফুল হাসান ভাই।

রিভিউঃ বাপ্পী খান। May 8, 2021

আরো রিভিউঃ https://www.goodreads.com/book/show/57336489

অদ্ভুতুড়ে বইঘর

রিভিউ

এক বসায় শেষ করলাম বইটা। চমৎকার গল্প। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্লটকে সঙ্গী করে এগিয়েছে। আছে মজাদার আলাপন, অসংখ্য চরিত্র, রহস্য এবং রোমাঞ্চকর ঘটনাক্রম। প্রতিটি চরিত্র সপ্রতিভ, একে অপরের থেকে ভিন্ন। গল্পে মজা লেগেছে রঞ্জু-মশা গোয়েন্দা(!) যুগল। খিজির আলী, আশফাক, হারান বাবু, থানার ওসি চরিত্রগুলো।

গল্পের কিছু স্কোপ ট্রাভেল করা যেত, কিন্তু সম্ভবত লেখক ইচ্ছাকৃত করেননি। পুরো বললে স্পয়লার হয়ে যাবে তাই বললাম না। তবে গল্প শেষ করার পর মনে হয়েছে এটার সিকুয়েল লেখার স্কোপ রয়েছে পুরোমাত্রায়। তাছাড়া আরও একটা বিষয়ে খটকা আছে, সেটাও ভেঙ্গে বলা যাচ্ছে না। বললে স্পয়লার হয়ে যাবে!

কিশোর উপন্যাস হিসাবে বেশ ভাল মানের হয়েছে বইটি। প্রচ্ছদও চমৎকার। ভাল লেগেছে।

রিভিউঃ প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার। Feb 22, 2016

https://www.goodreads.com/book/show/29222602

Shopping cart0
There are no products in the cart!
Continue shopping
0